বিয়ের রীতিনীতি!




বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বা বিভিন্ন ধর্মে বিবাহের জন্য রয়েছে নানান রীতিনীতি। যার সঙ্গে সারা জীবন যাপন করতে হবে, হুট করে তার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় না। বিয়েকে ঘিরে ধর্ম বা অঞ্চলে রয়েছে নানা সংস্কৃতি, রেওয়াজ, আচার-অনুষ্ঠান।

আজ জেনে নিন বিয়ের কিছু রীতিনীতি সম্পর্কে।

মুসলিম বিয়ে:

মুসলিম বিয়েতে সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ানো হয়। দেনমোহর ধার্য করা হয় ছেলের আর্থিক সামর্থ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। বিয়ের সময় একজন উকিল থাকেন। তিনি প্রথমে কনেকে জিজ্ঞাসা করেন, সে বিয়েতে রাজি আছে কিনা। কনে রাজি থাকলে বরকেও একই প্রশ্ন করা হয়। এরপর দোয়া কালাম করে সম্পন্ন করা হয় বিয়ে।

হিন্দু বিয়ে:

হিন্দু বিয়েতে বিয়ে হয় বেশ কিছু আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। প্রচলিত নিয়মে প্রথমে বাগদান পর্ব এবং সেখানেই পাটিপত্রে বর-কনের স্বাক্ষর। তারপর একে একে আশীর্বাদ, গায়ে হলুদ, তারপর বিয়ের আসর। সেখানে দুটি পর্ব – সাজ বিয়ে ও বাসি বিয়ে। সাজ বিয়েতে সাতবার প্রদক্ষিণ শেষে কনে আর বরকে বরণ করে নেয়া হয়। হয় মালাবদল। আর বাসি বিয়েতে দেবদেবীর অর্চনা শেষে কনের কপালে সিঁদুর দেয় বর। তারপর উভয় মিলে সাতবার অগ্নি দেবতাকে প্রদক্ষিণ করেন।

খ্রিষ্টান বিয়ে:

খ্রিষ্টান বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের তিন সপ্তাহ আগে পুরোহিতের কাছে বর-কনে নাম লেখান। এরপর ‘বান প্রকাশ’ অনুষ্ঠানে বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। বিয়ের আগ পর্যন্ত অপশক্তির নজর থেকে রক্ষার জন্য দুজনকে ‘রোজারি মালা’ পরতে হয়। বিয়ের দিন ভোরে কনের বাড়ি গিয়ে তাকে নিয়ে আসা হয়। এ সময় বরপক্ষ থেকে দেয়া পয়সা ঘরের মধ্যে ছুড়ে দেন কনে। এর অর্থ, বাড়ি ছেড়ে গেলেও, বাড়ির লক্ষী ঘর থেকে চলে যাচ্ছে না। এরপর গির্জায় বর-কনে দুজনের মধ্যে আংটিবদল করা হয়।

বৌদ্ধ বিয়ে:

পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের পর সামাজিকভাবে সবাইকে জানিয়ে তারিখ ঠিক করে বৌদ্ধবিহারে পাত্র-পাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বুদ্ধের পূজা করা হয়। ত্রি-স্বরণ পঞ্চশীল পূজার মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুকের আশীর্বাদ গ্রহণের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর একজন গৃহী তাদের সামাজিক অনুশাসন প্রদান করে।

ঢাকাইয়া বিয়ে:

‘পানচিনি’ অনুষ্ঠানে ঘটকের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার পর ‘মোতাসা-রাই’ বা ‘পাকাকথা’ অনুষ্ঠানে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। বিয়ে অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে দুই বাড়িতে আলাদাভাবে ‘হলদি’ বা ‘তেলাই’ অনুষ্ঠান হয়। এরপর অবিবাহিত অবস্থায় নিজের বাড়িতে বর বা কনের শেষ খাওয়া হিসেবে দুই বাড়িতে ‘আইবুড় ভাত’ নামের অনুষ্ঠান হয়। এরপর হয় মূল বিয়ের অনুষ্ঠান।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিয়ে:

চট্টগ্রামের বিয়ে সাধারণত বেশ আড়ম্বরপূর্ণ হয়। বিয়ের প্রাথমিক কার্যকলাপ অন্যান্য অঞ্চলের মতোই সম্পন্ন হয়। তবে বিয়ের আগে আয়োজন করা হয় ‘বউ জোড়নি’ অনুষ্ঠান। বর ও কনের মধ্যে আলাপ করিয়ে দেয়াই এর মূল লক্ষ্য। চট্টগ্রামের আরেকটি বিচিত্র আয়োজন হচ্ছে ‘ঘরজামাই বিয়া’৷

রাজশাহী অঞ্চলের বিয়ে:

এই অঞ্চলের বিয়েতে থাকে পিঠার জয়জয়কার। বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হওয়ার পর আঞ্চলিক গীতের তালে তালে বর-কনেকে নিজ নিজ বাড়িতে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় ‘থুবড়া’৷ সাধারণত ক্ষীর ও আন্ধাষা (তেলে ভাজা রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পিঠাবিশেষ) তৈরি করা হয়। এই মিষ্টি সাধারণত পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তৈরি করে পাঠানো হয় বর-কনের বাড়িতে।

এতক্ষণ যে রীতির কথা বলা হলো তা সব মানুষের পক্ষে পালন করা সম্ভব হয় না। কারণ, তাদের সেই সামর্থ্য থাকে না। আবার এর উলটোটাও ঘটে। যাদের অনেক সামর্থ্য আছে, তারা রীতির বাইরেও জাঁকজমকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করে থাকেন।


Tages : বিয়ের রীতিনীতি!

Category : Other

Related Posts